রাজনৈতিক টানাপোড়েন, নিরাপত্তাজনিত শঙ্কা এবং আয়োজক নিয়ে দীর্ঘ অনিশ্চয়তার পর গতকাল বুধবার এশিয়া কাপের সম্ভাব্য সূচি ঘিরে আশার আলো দেখাচ্ছে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)। একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের এশিয়া কাপ শুরু হতে পারে শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) এবং ফাইনাল অনুষ্ঠিত হতে পারে ২১ সেপ্টেম্বর। এই ১৭ দিনের টুর্নামেন্ট আয়োজনের মূল দায়িত্বে রয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। তবে রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং নিরাপত্তার কারণেই ম্যাচগুলো হতে পারে সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম আকর্ষণ ভারত-পাকিস্তান লড়াই নিয়েও এসেছে বড় খবর। সম্ভাব্য সূচি অনুযায়ী, গ্রুপ পর্বেই এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রথম মুখোমুখি লড়াই হতে পারে ৭ সেপ্টেম্বর। যদি দুই দল সুপার ফোর পর্বে পৌঁছে, তবে সেখানে তাদের আবার দেখা হতে পারে ১৪ সেপ্টেম্বর। দুই দল যদি ফাইনালেও পৌঁছায়, তাহলে মাসের মধ্যে তিনবার মুখোমুখি হতে পারে এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী।
এশিয়া কাপে অংশ নেবে ছয়টি দল-ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। গ্রুপ পর্ব শেষে শীর্ষ চার দল খেলবে সুপার ফোর পর্ব। সেখান থেকে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দুই দল উঠবে ফাইনালে। এবারের আসর অনুষ্ঠিত হবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। কারণ ২০২৬ সালে ভারতে এবং শ্রীলঙ্কায় আয়োজন হতে যাচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্কের জটিলতা ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ আয়োজনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে দুই দেশের সম্পর্ক আরও তলানিতে ঠেকে। সেই সময় ভারত থেকে দাবি ওঠে, পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো ধরনের দ্বিপক্ষীয় বা বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে খেলবে না তারা। তখন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে, ভারত হয়তো এশিয়া কাপ থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেবে।
তবে বিসিসিআই সচিব দেবজিৎ শইকিয়া স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ভারত এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি এবং সরকারের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে। বিসিসিআই জানিয়েছে, তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে আলাদা করে ভাববে। ভারত সরকারের কাছ থেকে অনুমতি পেলে তবেই টিম ইন্ডিয়া এশিয়া কাপে অংশ নেবে।
টুর্নামেন্টের সূচি নিয়ে এখনও চূড়ান্ত ঘোষণা আসেনি। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) জানিয়েছে, সূচি চূড়ান্ত করার জন্য তারা দুই সপ্তাহ সময় নিচ্ছে। কারণ, অংশগ্রহণকারী দেশগুলো নিজ নিজ সরকারের কাছ থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার চেষ্টা করছে।
এদিকে এশিয়া কাপের চূড়ান্ত সূচি প্রকাশে দেরি হওয়ায় স্পনসর এবং মিডিয়া স্বত্বধারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এসিসির পাঠানো চিঠিতে বিসিসিআইকে সতর্ক করা হয়েছে যে, সূচি ঘোষণায় বিলম্ব হলে অংশীদারদের কাছ থেকে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ আসতে পারে এবং তারা ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারে অথবা চুক্তির শর্ত শিথিল করতে চাইতে পারে।
২০২৩ সালে এশিয়া কাপও হয়েছিল হাইব্রিড মডেলে। ভারত দল তখন শ্রীলঙ্কায় খেলেছিল এবং লঙ্কানদের হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল। ২০২৫ এশিয়া কাপের ক্ষেত্রেও সেই মডেলে আয়োজনের কথা ভাবা হচ্ছে। বিসিসিআই এবং পিসিবির মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিও হবে পাকিস্তান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে হাইব্রিড মডেলে।
অন্যদিকে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর মতে, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়েই এশিয়া কাপে সব চেয়ে বেশি আগ্রহ। কারণ, দুই দেশের রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ হয় না বললেই চলে। তাই এশিয়া কাপ এবং আইসিসির বৈশ্বিক টুর্নামেন্টই এই দুই দলের লড়াই দেখার একমাত্র সুযোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে। সেই উত্তেজনা কাজে লাগিয়ে সম্প্রচারস্বত্বধারী সনি স্পোর্টস নেটওয়ার্ক ইতিমধ্যে বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু করেছে। প্রোমোতে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের নাজমুল হোসেন শান্ত, ভারতের সূর্যকুমার যাদব এবং শ্রীলঙ্কার চারিথ আসালাঙ্কাকে। এ থেকেই ধারণা করা হচ্ছে, এশিয়া কাপ আয়োজনের পথে এখন আর বড় কোনো বাধা নেই।
অবশ্য এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা আসেনি। তবে সূচি প্রকাশের দিকেই এগোচ্ছে এসিসি। এশিয়া কাপের মাধ্যমে এ অঞ্চলের ক্রিকেট প্রেমীরা একদিকে উপভোগ করবেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লড়াই, অন্যদিকে রাজনৈতিক জটিলতার আবহে উত্তেজনাও থাকবে চরমে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

এশিয়া কাপের সম্ভাব্য সূচি প্রকাশ, একাধিকবার মুখোমুখি হতে পারে ভারত-পাকিস্তান
- আপলোড সময় : ০২-০৭-২০২৫ ০৯:০৪:১৫ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০২-০৭-২০২৫ ০৯:০৪:১৫ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ